কমিটির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র - কমিটির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

কমিটি বর্তমানকালে একটি বহুল ব্যবহৃত প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু কাজ থাকে যা সরলরৈখিক নির্বাহী বা উপদেষ্টা কৰ্মী নিয়োগ বা কোনো বিশেষ বিভাগ খুলে সম্পাদন করা যায় না । অথচ উক্ত কাজ সম্পাদন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় । তাই উক্ত বিশেষ কাজ সম্পাদনের জন্য বিশেষ সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবেই কমিটির ব্যবহার করা হয়ে থাকে । নিম্নে কমিটির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :

১. একাধিক ব্যক্তির সম্মিলন (Association of a group of people) : কমিটি হলো কতিপয় ব্যক্তির সমষ্টি । এখানে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একাধিক ব্যক্তির সম্মিলন ঘটে। এর সদস্যদের দায়িত্বও থাকে যৌথ । এক সদস্যের কমিটি গঠনের কথা কখনও বলা হলেও কার্যত তাকে কমিটি বলার কোনো সুযোগ নেই । কমিটিকে যদি একটি সংগঠন ধরা হয় তবে একক সদস্যের সমন্বয়ে কখনই কমিটি সংগঠন গড়ে উঠে না ।

২. নির্বাচিত বা মনোনীত সদস্য (Elected or nominated member) : কমিটির সদস্যগণ সাংগঠনিক নিয়মে নির্বাচিত বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃক মনোনীত হয়ে থাকে । কোনো কোম্পানিতে পরিচালনা বোর্ডের সদস্যগণ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত নিয়মে নির্বাচিত হন। কলেজ গভর্নিং বডিও নির্দিষ্ট নিয়মে নির্বাচিত হয়ে থাকে । আবার কোনো বিষয়ে তদন্ত কমিটি, সুপারিশ কমিটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কমিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃক মনোনীত হন ।

৩. স্থায়ী বা অস্থায়ী প্রকৃতি (Permanent or temporary in nature) : কমিটি স্থায়ী বা অস্থায়ী বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । কোনো প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ কমিটি, অর্থ কমিটি, সমন্বয় কমিটি ইত্যাদি স্থায়ী প্রকৃতির কমিটি । অন্যদিকে তদন্ত কমিটি, সাক্ষাৎকার বোর্ড, প্রতিবেদন প্রণয়ন কমিটি ইত্যাদি অস্থায়ী প্রকৃতির কমিটি ।

৪. খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী কর্ম (Part-time or temporary function) : কমিটির সদস্যপদ কোনো স্থায়ী বা সার্বক্ষণিক কর্ম নয় । কমিটি সদস্যদের সাধারণত একটি পৃথক নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র বা পরিমণ্ডল থাকে । কমিটির সদস্য নির্বাচিত বা মনোনীত হওয়ার কারণে এটা তাদের একটা অতিরিক্ত কর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় । এজন্য তারা কোনো বেতন পান না । মিটিং-এ উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদেরকে সাধারণত সম্মানী বা ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে ।

৫. বহুমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহার (Use for multiple purposes) : বর্তমানকালে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ও বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা হয় । প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে সরলরৈখিক কর্তৃত্ব সহযোগে যেমনি কমিটি গঠন করা হয় তেমনি অনেক সময় ঊর্ধ্বতনকে সহযোগিতা করার জন্যও কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে । পরামর্শ প্রদান, বিশেষ প্রশাসনিক কাজ সম্পাদন, বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা ইত্যাদি নানান প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে ।

৬. সদস্যদের সমমর্যাদা (Equal status of members) : কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকই সমান মর্যাদা ও কর্তৃত্ব ভোগ করে । কমিটির কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কাউকে কমিটির আহ্বায়ক, চেয়ারম্যান বা সদস্য সচিব মনোনীত করা হলেও কমিটির সভায় প্রত্যেক সদস্যই সমান মর্যাদা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হয় । এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক নীতিমালার অনুসরণ করা হয়ে থাকে । সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।

৭. সহযোগী ব্যবস্থা (Subsidiary arrangement) : প্রাতিষ্ঠানিক কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সংগঠন কাঠামোর বাইরে কমিটি বা কমিটি সংগঠন একটি বিশেষ সহযোগী ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে । কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ পরিচালনা সম্ভব নয় । অথচ এমন কিছু কাজ রয়েছে যা সরলরৈখিক নির্বাহী বা পদস্থ কর্মী দিয়েও সম্পাদন সম্ভব হয় না। সেখানে সংগঠনের অভ্যন্তরে কমিটি একটি সহযোগী ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে ।

Content added By
Promotion